শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

আমার ভ্রমণসমগ্র (পর্ব-৩) ‍“মালয়েশিয়া”

নজির হোসেন হাসু : কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা অবসর পেয়ে একেবারে একা বেড়িয়ে পড়েছিলাম মালয়েশিয়া ঘুরতে। যদি ভেবে থাকেন দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবেন তাহলে মালয়েশিয়া হতে পারে আপনার জন্য চমৎকার এক ভ্রমণ গন্তব্য। কম সময়ে কম খরচে যারা কাছের কোনো দেশে ঘুরতে যেতে চাইছেন তারা যেতে পারেন এশিয়ার ভ্রমণ স্বর্গ মালয়েশিয়াতে। বাংলাদেশী ভ্রমণ প্রেমীদের সবসময় পছন্দের শীর্ষে থাকে এই মালয়েশিয়া। প্রতি বছর প্রচুর বাংলাদেশী পর্যটক মালয়েশিয়া ভ্রমণে যায়। বৈচিত্র্যতায় ভরপুর এই দেশটিতে রয়েছে দেখার মত অনেক আকর্ষণীয় স্থান। সমুদ্র, পাহাড়, দ্বীপ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি কি নেই এখানে। চাইলে ইচ্ছেমত  শপিংও করে নিতে পারবেন। শপিং এর জন্য মালয়েশিয়ার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি।

আমি সিংগাপুর ভ্রমন শেষ করে বাস দিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তখনও সুর্য উঠেনি কুয়ালালামপুরের আকাশে। বাস থামলো দু দেশের Immigration চেক পোস্টে প্রয়োজনীয় চেকিং শেষে মালয়েশিয়া প্রবেশ করলাম। Taxi করে কে এল সি সি পৌঁছলাম। ৮০ রিঙ্গিত দিয়ে 3 star হোটেলে ভালো করে একটা শক্ত ঘুম দিলাম। পরের দিন ছিলো শুক্রবার। জুম্মার নামাজে আগেই হোটেল রুম ত্যাগ করে আমার এলাকার মাওলানা কাউসার ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি আমাকে বল্লেন সামনের ষ্টেশন থেকে “পাচানসারীগামী” বাসে উঠে চায়না মার্কেট যাওয়ার জন্য। আমি তাই করেছিলাম। তিনি সেখানে ইমামতি + ব্যবসা করেন। বাসে থাকতেই জুম্মার নামাজ শেষ হয়ে গিয়ছিলো। পরে চায়না মার্কেটের সামনে উনার মসজিদে যোহরের নামাজ পড়েছিলাম। তার পরেই তিনি এসে আমকে রিসিভ করে সোজা স্টেটালিং street য়ের একটি হোটেলে রুম ম্যানেজ করে দিলেন। হোটেলে বসেই মালয়েশিয়ান ট্যুরিজম গাইড থেকে দর্শনীয় স্থান গুলি দেখে নিলাম। আমার দেখা জায়গাগুলি বন্ধুদের জন্য তুলে ধরলাম।

১. পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার : মালয়েশিয়ার নাম আসলে প্রথমেই যেটির নাম আসে তা হল পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। মালয়েশিয়া আসলে এই টুইন টাওয়ার না দেখলে যেন সফরটাই বৃথা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা টুইন বিল্ডিং। ৮৮ তলা বিশিষ্ট এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে বিভিন্ন অফিস আছে। এই টাওয়ারের নির্মাণ কৌশলে মালয়েশিয়ার মুসলিম সংস্কৃতির প্রতিফলন দেখা যায়। এই টাওয়ারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সংযোগ সেতু যার নাম স্কাইব্রীজ যা দুটি টাওয়ারের ৪১ ও ৪২ তলাকে যুক্ত করেছে। এই ব্রিজ থেকে পুরু শহরের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। রাতের টুইন টাওয়ারের সৌন্দর্য দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সন্ধ্যার পর টুইন টাওয়ারের সামনে কে এল সি সি এলাকা আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে উঠে এবং পর্যটকদের আগমনও বাড়তে থাকে। এই সময় যাওয়াটাই সবচেয়ে ভাল সময়। ৫০ রিঙ্গিত বা ১২শ টাকার বিনিময়ে আপনিও উঠতে পারবেন পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের এই স্কাইব্রিজে।

২. পেনাং : পেনাং মালয়েশিয়ার অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণ। এটি মালয়েশিয়ার প্রধান ও এশিয়ার বিখ্যাত একটি দ্বীপ । নীল জলরাশি, পাহাড় ও বিশাল সেতুর বন্ধনে ঘেরা পেনাং মূলত গভীর সমুদ্রের মাঝে বিশাল একটি জেটি। এখানে আমদানি পণ্য খালাস করা হয়। এখানে চমৎকার একটি সেতু আছে। এছাড়া পেনাং এর রাষ্ট্রীয় মসজিদ এই বন্দরের কাছেই। এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমকালো মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এখানে সব কিছুই দেখার মত। পেনাং এর মূল আকর্ষণ ক্যাবল ট্রেন। পেনাং গেলে অবশ্যই এই ক্যাবল ট্রেনে চড়বেন। প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য আট রিঙ্গিত আর ছোট ও বৃদ্ধদের জন্য চার রিঙ্গিতের বিনিময়ে এই ট্রেনে চড়ে যেতে পারবেন পেনাং পর্বতে। এটি আপনার জন্য দারুণ একটি অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে।

৩. বাটু কেভস : বাটু কেভস মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এখানে মূল গেইটের একটু ভেতরেই ১৪০ ফুট উঁচু এক মনোরম প্রভু মুরুগানের মূর্তি রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি গুহা রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে বড় গুহাটির নাম হল মন্দির গুহা। এটি প্রায় ১২২ মিটার উঁচু। আশেপাশের পাহাড় এই গুহার সৌন্দর্য আরো ফুটিয়ে তুলেছে। এছাড়া দেখা মিলবে শত শত কবুতর ও বানরের। এই মন্দিরে পৌঁছাতে আপনাকে ২৭২ ধাপ সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক বিভিন্ন দেশ থেকে বাতু গুহায় ভিড় করেন।

৪. মাউন্ট কিনাবালু : মাউন্ট কিনাবালু একটি হিমালয়। এটি মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত। এর উচ্চতা ৪,০৯৫ মিটার। রহস্যময় মাউন্ট কিনাবালু সাধারণত মেঘের মধ্যে আবৃত থাকে। সব মৌসুমেই এই পর্বতশৃঙ্গটি শান্তি ও নির্মলতা ছড়িয়ে দেয় পর্যটকদের মাঝে। মাউন্ট কিনাবালুর তাজা, শীতল বায়ু আ পনাকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। কথা দিলাম আপনি টকবেননা।

৫. তামান নেগারা : তামান নেগারা বিশ্বের প্রাচীনতম ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট এর মধ্যে একটি। পশ্চিম মালয়েশিয়ার উত্তরাংশের তিনটি রাজ্য জুড়ে তামান নেগারা অবস্থিত।এখানে আছে গেনতিং হাইল্যান্ড।এটা দেখার জন্য সকালে এসি বাসে উঠি।প্রায় ৪ ঘণ্টা জার্নির পর সেখানে পৌছে যাই। মুল স্পটে পৌছতে ক্যাবলCarদিয়ে উচু পাহাড় আর মেঘের সাথে মিতালি করে পৌছে গেলাম।ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয় হাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এই স্পটটি আসলে মালয়েশিয়ার একটি অন্যতম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। গ্র্যান্ড হোটেল, থিম পার্ক, এ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ক্যাসিনো সম্বলিত পরিপুর্ন বিনোদন কেন্দ্র এই স্থানটি। ভুমি থেকে অনেক উচুতে অবস্থিত হওয়ায় সর্বদাই চলছে মেঘের লুকোচুরি। হালকা শীতভাব ও লাগে একে বারে গরমের দিনে।তাই শীতের হালকা কাপড় নিতে ভুলবেন না।

যাইহোক আশা করছি পৃথিবী সুস্থ হলে আবারও এই সুন্দর দেশটি ঘুরে আসবো কোন সময়।

লেখক :- পর্যটক, বহুভাষাবিদ, প্রবাসী, বাহুবল, হবিগঞ্জ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com